বালু শীতলক্ষ্যা নদীতে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে মরে যাচ্ছে মাছ

বালু শীতলক্ষ্যা নদীতে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে মরে যাচ্ছে মাছ

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ

 

কলকারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছে বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি। এতে মরে যাচ্ছে মাছ। ব্যাহত হচ্ছে ফসলের উৎপাদনও। কাঙ্কিত মাছ ও ফসল না পেয়ে পেশা বদলাচ্ছেন জেলার জেলে ও কৃষকরা।
রূপগঞ্জ উপজেলার দেশি মাছের ভান্ডার বলা হয় বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীকে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে এ নদের পানি দিয়ে চাষাবাদ করেন জেলার চার উপজেলার কৃষক। তবে কলকারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছে বিশাল জলরাশি। এতে মরে যাচ্ছে মাছ এবং কমে যাচ্ছে ফসলের উৎপাদন।
জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলাসহ জেলার চার উপজেলায় শীতলক্ষ্যা নদীর অবস্থান। এক সময় এসব নদীর পানি ছিল স্বচ্ছ টলটলে। প্রাকৃতিকভাবেই পাওয়া যেত রুই-কাতল ছাড়াও কই, শিং, মাগুর, পুঁটি, মেনি, টাকি, শোল, ট্যাংরা, গুতুম, বেলে, মলা, ছোট বাইমসহ হরেক রকম দেশি মাছ। ১০ বছর আগেও নারায়ণগঞ্জ জেলার মাছের চাহিদার ৭৫ ভাগ খাল-বিল, নদী-নালা থেকে আসত। তার মধ্যে ৫০ ভাগই পাওয়া যেত এ নদী থেকে।
এক সময় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন নদী তীরবর্তী হাজার জেলে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাড়াও রাজধানী ঢাকা, নরসিংদী ও আশপাশের জেলায় সরবরাহ করা হতো বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর মাছ। দেশি মাছের জন্য শীতলক্ষ্যা নদী ছিল জেলার ঐতিহ্য। কিন্তু কলকারখানার বিষাক্ত-বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছে বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি।
বালুনদ এলাকায় বিলে খর জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন নুরুজ্জামান। তিনি জানান, তিন-চার বছর আগেও প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এক ঘণ্টায় যে মাছ পাওয়া যেত এখন সারা দিনেও তার অর্ধেকও পাওয়া যায় না। কারখানার পানিতে বিষ আছে। ঐ বিষ, বিল শেষ করে দিছে। বিষাক্ত পানিতে পোনা মাছ মরে যাওয়ায় মাছের বৃদ্ধি হচ্ছে না বলেও পানিতে ভাসতে থাকা মরা মাছ দেখিয়ে জানান নুরুজ্জামান।
উপজেলার বড়ালু  গ্রামের মিলন মিয়া বলেন, শুধু মাছ নয়, দূষিত পানির কারণে ধান উৎপাদনও কমে গেছে। আগে শীতলক্ষ্যার পানিতে গোসল, গৃহস্থালি কাজসহ কৃষিজমি চাষাবাদ করা হতো। এখন পানিতে নামা যায় না। পানি লাগলে শরীর চুলকায়, ঘা হয়। কৃষকের সর্বনাশ করছে কারখানার মালিকরা।
নদী বাঁচাও আন্দেলনের নেতা লায়ন মীর আব্দুল আলিম বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে কলকারখানার বিকল্প নেই। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই প্রাকৃতিক জলাধারকে ধ্বংস করে নয়। কারখানার বর্জ্যে  উপজেলার সব নদনদী, খাল-বিল ও জলাশয় দূষিত হয়ে পড়ছে। কারখানাগুলো ইটিপি ব্যবহার না করার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নদীর মতোই প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষা করতে না পারলে আমাদের প্রাকৃতিক দেশীয় মাছ এ অঞ্চল থেকে বিলুপ্তি ঘটবে। এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, প্রশাসন এবং কলকারখানা অধিদপ্তরকে আরো সচেষ্ট হতে হবে।
বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মো. আনোয়ার সাদত বলেন, দেশীয় মাছ, ধান এবং চাষাবাদে এসব নদীর রয়েছে বিরাট ভূমিকা। দূষণের কবলে পড়ে শুধু মাছের উৎপাদন কমেছে তা নয়। উৎপাদন কমেছে ধানেরও। তাই নদীর ঐতিহ্য রক্ষার জন্য দূষণ বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইমরান হোসান জানান, দেশীয় মাছের সবচেয়ে বড় ভা-ার নদী। কয়েক বছর আগেও এসব নদী থেকে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। দূষণের কারণে এবং ভরাট হয়ে যাওয়ায় আগের মতো এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। দূষণ বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করেছেন বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ পরিবেশ ও বন কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, কোন কোন কারখানার বর্জ্যে ঐ বিলের পানি দূষিত হচ্ছে তা তদন্ত করে বের করা হবে এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।####

আপনি আরও পড়তে পারেন